বাবার স্ত্রী|পর্ব ১|জীবনের গল্প |ভালোবাসার মায়াজাল|


  • বাবার স্ত্রী

.পর্ব ১
.
বয়স টা তখন খুব বেশি নয়। সবে মাত্র ১২।
আবদার করেছিলাম, আমার ভাই চাই। চাই তো চাই।
আবদার পূর্ণ করতে গিয়ে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মা নামক মানুষ টা।
আজ ও মনে পড়ে শীতের সকালে মায়ের নীথর শরীর টা যখন বারান্দায় ছিলো, মুখ টা নীল হয়ে গিয়েছিলো,তখন আমার কোলে আসে আমার ভাই।
ছোট্ট ছোট্ট হাত পা, চোখ দুটো।
লাল তোয়ালে প্যাচানো ছিলো।
মা সব সময় বলতো আমি কি? মরে গেলে বুঝবি।
সেদিন ও মায়ের কমতি বুঝিনি।
বাড়ি ভর্তি কত মানুষ ছিলো।
এক সময় কাফন পড়িয়ে কালেমা শাহাদাত বলতে বলতে নিয়ে গেলো।
তখন বুঝলাম মা আর আসবে না। খালি পায়ে দৌড়ে কবরস্থান অবধি গিয়েছিলাম।
মেয়ে মানুষ তো তাই আর ভিতরে যেতে দিলো না। খুব ইচ্ছে করছিলো মা কে আরেকটা বার দেখবো.. । ।।
.
.
বাবা মা কে খুব ভালোবাসতো। প্রেমের বিয়ে ছিলো তাদের।
বাবা এক সময় পুরোপুরি ভেংগে পড়ে। সবাই স্বান্তনা দিচ্ছিলো।সেদিন মনে করেছিলাম বাবা হয়তো কাছে টেনে নিবে, কিন্তু তার শোক হয়তো আমাদের থেকেও বেশি ছিলো।
.
,
ছোট্টুনি একটা বাবু। পিটপিট করে তাকিয়ে দেখছে সব।
কিছুক্ষণ পর সে কি কান্না? কোন কিছুতেই যেনো থামে না। পরে মনে হলো হয়তো ক্ষুধা লেগেছে।
ফুপু ছিলো উনি ভাই কে কিছু খাওয়ালেন।
হয়তো চিনির পানি।
চিনির পানি খেলে কি পুষ্টি হবে??
তিন দিন পর ধীরে ধীরে সবাই চলে যায়।
চাচা-চাচী, দাদী আর আমরা দুই ভাই বোন।
রাতের বেলা দাদী আমাদের সাথে থাকতো। চাচীর তখন ৭ মাস।
ভাই রাতে খুব কান্না করতো, দাদী প্রথম প্রথম সাথে থাকলেও পরে আর থাকতো না।
বয়স্ক মানুষ হয়তো ঘুমানো বেশি দরকার ছিলো।
বাবা খুব একটা আর আমাদের খেয়াল নেয় না।
প্রয়োজন ছাড়া কেউ কথাও বলে না।
দেখতে দেখতে ২১ দিন হয়ে এলো। পাশের বাড়ির নিমু ফুফু বললো ভাই রে না কি টিকা দিতে হবে।
সেইদিন ভাই রে তিন টা টিকা দিলো। রাতে খুব জ্বর ছিলো, দাদীও ছিলো না, পুরো শীতের রাত ভাই কে কোলে নিয়ে হাটতে হয়েছিলো।
ভাইয়ের বয়স যে দিন ৩৫ দিন সেদিন স্কুলে রেজাল্ট দিলো। জানতে যাই নি। পরে টুকি এসে বললো প্রথম হয়েছি। বরাবর ছাত্রী ভালোই ছিলাম।
স্পষ্টভাবে মনে আছে,
যেদিন বই আনতে যাই কাকি কে বলে গেছিলাম ভাই কে দেখতে।
নিশ্চিত ছিলাম যে তারা তো দেখবেই কিন্তু ভয় ভয় লাগছিলো।
বাড়ি থেকে অনেক টা দূরে কান্নার শব্দ আসছিলো। দৌড়ে গিয়ে দেখি ভাই খুব কাদছে কাকি কোলে নেয় নি কারণ সে পায়খানা করেছিলো বলে।
.
মা মারা যাওয়ার পর ভাইকে পেয়ে দায়িত্ব হয়তো বেড়েছিলো কিন্তু সেদিন সত্যি সত্যি বড় হয়ে গেলাম।
.
.
কয়েক দিন যাবত দাদী কে বলতে শুনতেছি
বউ মরবো মাসের মাস পোলা বিয়া করামু চান্দের চান।
তুই বেডা মানুষ না?
তোর ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নাই? যা কই তাই কর। তোর খারাপ তো চাই না?
.
বুঝলাম দাদীর বোনের মেয়ে নীলু আন্টির সাথে বাবার বিয়ে।
বাড়িতে উৎসবের আমেজ পড়ে গেলো। শুধু ঘরকুনো হয়ে রইলাম আমরা অভাগী দুই ভাই-বোন।
.
.
চলবে
-Sabiya mon

Comments

Popular posts from this blog

তোর কি আমার পেছনে লাগা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই(সাফা)"ঝগড়াটে ভালোবাসা"ভালবাসার মায়জাল

ঝগড়াটে ভালোবাসা|:কি করো আমার বাবুর আম্মু ?ভালবাসার মায়জাল